বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যনের '৯০ ঘণ্টা কাজ' মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জারি আছে। এই নিয়ে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সেই মন্তব্যের জন্যে সামলোচিত হয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন। তবে এবার তিনি সমর্থন পেলেন নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন আমলার থেকে। ভারতের জি-২০ শেরপা এবং নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও অমিতাভ কান্ত এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই ইস্যুতে কথা বলেন। তাঁর কথায়, 'আমি স্লগ আউট করি। আমি স্লগ আউটে বিশ্বাস করি। আমি কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে যদি ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হয়ে উঠতে হয়, তাহলে কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই।' (আরও পড়ুন: 🐈'দিল্লির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', গলাবাজি বাংলাদেশে, গভীর রাতে যা হল...)
আরও পড়ুন: ൩ফের পডকাস্টে মোদী, মুখোমুখি হবেন লেক্স ফ্রিডম্যানের, কে এই মার্কিনি?
চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের উদাহরণ টেনে অমিতাভ কান্ত বলেন, 'কঠোর পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভারতকে মিডল ইনকাম ক্র্যাপ থেকে বের হতে হয়, তাহলে মানুষজনকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাপান কঠোর পরিশ্রম করেছিল। কোরিয়াও এই কঠোর পরিশ্রম করেছে। তিন তিন দশক ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে।' অবশ্য তিনি বলেন, 'অবশ্য কঠোর পরিশ্রম করা মানে এই নয় যে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স থাকবে না। তবে ভারতীয়দের বুধতে হবে যে কোনও দেশই (দেশের অর্থনীতি) কঠোর পরিশ্রম ছাড়া ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়নি। ভারতকে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স রাখতে হবে। তবে তা কঠোর পরিশ্রম করেই রাখতে হবে।' প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অমিতাভ কান্ত মোদীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। এদিকে বিজেপি দাবি করে, মোদী দিনে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টাই ঘুমান। বাকি সময় তিনি কাজ করেন। এহেন মোদী ঘনিষ্ঠ অমিতাভের গলাতেও শোনা গেল 'কঠোর পরিশ্রম' করার বার্তা। (আরও পড়ুন: ♕'সীমান্তে একটি বাংলাদেশি লাশ পড়লে ভারতে ফেলা হবে দু'টি', হুঁশিয়ারি এল ওপার থেকে)
আরও পড়ুন: ꦏশীঘ্রই মোদীর কাছে আসতে পারে হোয়াইট হাউজের আমন্ত্রণ, ভারত সফরে আসতে পারেন ট্রাম্প
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ চলাকালীন সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর মতো মাল্টি-বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি সংস্থা এখনও কর্মীদের শনিবার কাজ করাচ্ছে? তার জবাবে সুব্রহ্মণ্যন নাকি বলেছিলেন, 'আমার এটা ভেবে অনুশোচনা হচ্ছে যে আমি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারছি না। আমি যদি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারতাম, তাহলে আমি খুশি হতাম। কারণ, আমি রবিবার কাজ করি। বাড়িতে বসে আপনারা কী করবেন? কতক্ষণ নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? ধুর, অফিসে চলে যান। কাজ করুন।' এরপরই সুব্রহ্মণ্যন তাঁর এক অভিজ্ঞতা কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে বলেন, 'একবার এক চিনা ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, চিন অনায়াসেই আমেরিকাকে হারিয়ে দিতে পারে। কারণ, চিনারা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করেন। সেখানে মার্কিনিরা সপ্তাহে মাত্র ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। তাই আপনাকে যদি বিশ্বের সেরা হতে হয়, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা করে কাজ করতেই হবে। আপনারা সেটা শুরু করে দিন।' পরে সুব্রহ্মণ্যনের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবং অনেক শিল্পপতি এই নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। (আরও পড়ুন: ܫগাজায় ফিরেও ফিরছে না শান্তি? যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগেই নয়া হুমকি ইজরায়েলের)
আরও পড়ুন: ꧂আরজি কর কাণ্ডে 'সুপ্রিম নির্দেশিকা' অমান্য করছে CBI? বিস্ফোরক নির্যাতিতার মা
🦄 পরে এই বিতর্ক নিয়ে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর হিউম্যান রিসোর্স প্রধান সোনিকা মুরলীধরন দাবি করেন, সংস্থার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ওই মন্তব্যের আগে কী বলেছেন, পরে কী বলেছেন, সেইসব বিবেচনা না করেই তাঁকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করা হচ্ছে। কখনওই সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের ‘নিদান’ দেননি বা ঘুরিয়েও সেটা বলতে চাননি। একেবারে হালকা চালে সুব্রহ্মণ্যন সেই মন্তব্য করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সোনিকা। সোনিকার কথায়, 'উনি প্রত্যেক কর্মীকে নিজের বর্ধিত পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। একতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বোধ জাগিয়ে তোলেন, যা আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় বিরল।' তবে তাতেও বিতর্ক থামার নাম নেই।